এবিসি ওয়ার্ল্ড নিউজ ২৪.কম: মেসি ঝলকে ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়ন ইতালিকে প্রীতি ম্যাচে ৩-০ গোলে পরাজিত করে বিশ্বকাপের আগে নিজেদের প্রস্তুতির কিছুটা জানান দিয়ে রাখলো দূরন্ত আর্জেন্টিনা। এনিয়ে তৃতীয়বারের মত মহাদেশীয় দুই শিরোপাধারী কোপা আমেরিকার আর্জেন্টিনার ও ইউরোর ইতালিকে নিয়ে ওয়েম্বলিতে এই ম্যাচ আয়োজন করা হয়, যার নামকরণ করা হয়েছে ফিনালিসিমা। ১৯৯৩ সালে দিয়েগো ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা ডেনমার্ককে পরাজিত করার পর এটাই প্রথম ফিনালিসিমা। কাল ম্যাচের সব আকর্ষনই কেড়ে নিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার লিওনেল মেসি। নিজেদের সম্মান রক্ষার এই ম্যাচটি প্রীতি ম্যাচ হলেও কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলেনি। যদিও মেসির দুর্দান্ত পারফরমেন্সে প্রথমার্ধেই আকাশী নীল শিবির ২-০ গোলে এগিয়ে যায়। লটারো মার্টিনেজ ও এ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া গোল দুটি করেন। এরপর ম্যাচের একবারে শেষ মুহূর্তে ইনজুরি টাইমে পাওলো দিবালা তৃতীয় গোলটি করেছেন। বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজিতে আসার পর হতাশাজনক একটি মৌসুম শেষ করা মেসি যেন আবারো স্বরুপে ফিরলেন এই ম্যাচের মাধ্যমে। একইসাথে বিশ^কাপের আগে নিজের জাতটা আরো একবার প্রতিপক্ষদের মনে করিয়ে দিলেন। ম্যাচ সেরা নির্বাুচত হওয়া ৩৪ বছর বয়সী মেসি ছিলেন দুটি গোলের যোগানদাতা। ম্যাচ শেষে সতীর্থরা তাই তাকে আকাশে উঁচিয়ে ধরতে কোন ভুল করেননি। এ সময় মেসি বলেন, ‘আজ আমাদের সামনে কঠিন একটি পরীক্ষা ছিল। কারন ইতালি অবশ্যই বিশে^র অন্যতম সেরা দল। আমরা জানতাম ম্যাচটা মোটেই সহজ হবে না। তাদেরকে হারিয়ে শিরোপা হাতে তোলার আনন্দই ভিন্ন। ওয়েম্বলির মাঠ আজ আর্জেন্টাইনদের দিয়ে পরিপূর্ণ ছিল। আজকের এই অভিজ্ঞতা সত্যিই অসাধারন।’ ২০২১ সালে ব্রাজিলকে ফাইনালে হারিয়ে কোপা আমেরিকা জয়ের মাধ্যমে ২৮ বছরের মধ্যে প্রথমবার দক্ষিণ আমেরিকান শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে আর্জেন্টিনা। একইসাথে বিশ^কাপের টিকিট পাওয়া দলটি এখন কাতারের মাটিতে নিজেদের সেরাটা দিতে প্রস্তুত। কাল পুরো দলের উজ্জীবিত পারফরমেন্স অন্তত তারই প্রমান দিয়েছে। বিশ^কাপের শিরোপা জয়ে বরাবরের মতই অন্যতম ফেবারিট দল হিসেবেই তারা মাঠে নামবে। এনিয়ে টানা ৩২ ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে আলবেসেলেস্তারা। কাতারে মেসি যদি তার প্রত্যাশানুযায়ী পারফর্ম করতে পারে তবে ১৯৮৬ সালের পর প্রথমবারের মত বিশ^কাপের শিরোপা জয়ে লিওনেল স্কালোনির দলের বিপক্ষে যেকোন দলকেই কঠিন লড়াই করতে হবে। দলের আরেক অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার ডি মারিয়া বলেছেন, ‘কোপা আমেরিকা জয়ের পর সবকিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে। আমরা এখন নিজেদের খেলা দারুন উপভোগ করি। সবকিছুই সহজ মনে হয়। তারপরেও আমরা মাটিতেই পা রাখারা চেষ্টা করছি।’ বিপরীতে ইতালির ক্ষেত্রে চিত্রটা একেবারেই ভিন্ন। টানা দুইবার বিশ^কাপ খেলতে না পারার আক্ষেপ এখনো পোড়াচ্ছে আজ্জুরিদের। এবার তো বিশ^কাপ বাছাইপর্বের প্লে-অফের সেমিফাইনালে পুঁচকে নর্থ মেসিডোনিয়ার কাছে পরাজিত হয়ে বিদায় নিতে হয়েছে। ওয়েম্বলির এই মাঠেই ১১ মাস আগে ইংল্যান্ডকে পরাজিত করে ইউরোর শিরোপা ঘরে তুলেছিল ইতালি। বিশ^কাপে খেলতে ব্যর্থ হবার পর রবার্তো মানচিনি তার তরুণ প্রজন্মের উপর ভরসা করা শুরু করেন। জার্মানী, ইংল্যান্ড ও হাঙ্গেরির বিপক্ষে নেশন্স লিগই এখন তার মূল লক্ষ্য। কালকের ম্যাচের মাধ্যমে ইতালি তাদের দীর্ঘদিনের অধিনায়ক গিওর্গিও চিয়েলিনিকে বিদায় জানিয়েছে। ১১১৭ ম্যাচ খেলা এই ডিফেন্ডারের কালই ছিল জাতীয় দলের জার্সি গায়ে শেষ ম্যাচ। কাল ম্যাচ শেষে মানচিনি বলেছেন, ‘তারা আজ আমাদের থেকে ভাল খেলেছে। প্রথমার্ধে আমরা ম্যাচে টিকে থাকলেও সেটা যথেষ্ঠ ছিলনা।’ কাল অপ্রতিরোধ্য মেসির প্রতিটি টাচই ছিল আর্জেন্টিনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ২৮ মিনিটে তার লো ক্রসে লটারো মার্টিনেজ পোস্টের খুব কাছে থেকে বল জালে জড়ালে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। প্রথমার্ধের স্টপেজ টাইমে মার্টিনেজের নিখুঁত পাসে ডি মারিয়া ইতালিয়ান গোলরক্ষক ডোনারুমাকে পরাস্ত করলে ব্যবধান দ্বিগুন হয়। ৬০ মিনিটে ডি মারিয়া নিজের দ্বিতীয় গোল পেয়েই গিয়েছিলেন। কিন্তু ডোনারুমা দারুন দক্ষতায় কর্ণারের মাধ্যমে তা রক্ষা করেন। ইনজুরি টাইমে মেসির আরো এক এসিস্টে দিবালা দলের হয়ে তৃতীয় গোলটি করলে বড় ব্যবধানে ইতালির পরাজয় নিশ্চিত হয়।