রংপুর, (এবিসি ওয়ার্ল্ড নিউজ ২৪.কম ) : রংপুর চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির (আরসিসিআই) সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় প্রস্তাবিত ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের বাজেট মানুষের জীবন-জীবিকা সুরক্ষা উপযোগী, বাস্তবমুখী, কর্মসংস্থানমুখী, জনকল্যাণমূলক, ব্যবসা ও শিল্প সহায়ক বলে মন্তব্য করেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল উত্থাপিত ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ শিরোনামের শ্লোগানকে সামনে রেখে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে বাসসের সঙ্গে আলাপকালে তিনি রংপুর চেম্বারের পক্ষ থেকে এ প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে মূল্যম্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্য, কৃষি, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি, শিক্ষা, খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে কৃষি খাতে রেকর্ড পরিমাণ ভর্তুকি, মহামারীর ক্ষতি কাটিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যকে স্বাভাবিক রাখতে ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর বাস্তবায়ন সম্পন্ন করা, কর ও ভ্যাট কমিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য আর বিনিয়োগকে চাঙা করার চেষ্টার মাধ্যমে কর্মসংস্থান বাড়ানো এবং খাদ্য, কৃষি ও শিল্প উৎপাদন বাড়ানো, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখা, বাজেট ঘাটতি কমানো, নতুন দারিদ্র্য ঠেকানো, দেশী-বিদেশী নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে করপোরেট করহার হ্রাসের উদ্যোগুলোকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়ায় প্রস্তাবিত বাজেটকে ব্যবসা ও শিল্প সহায়ক হবে। তিনি ব্যাপক কর্মসৃজনের লক্ষ্য নিয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, নিত্যপণ্যের দামে লাগাম টানতে এবং উৎপাদন ব্যয় কমাতে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি, নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তায় ভর্তুকি প্রদানের মত বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত থাকায় অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করবে বলে প্রস্তাবিত বাজেটকে সময়োপযোগী মনে করেন। প্রস্তাবিত বাজেটের ঘাটতি মেটাতে সরকার কর্তৃক ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়ার যে প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে মন্তব্য করে রংপুর চেম্বারের সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু ঘাটতি পূরণে ব্যাংক খাতের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে বৈদেশিক উৎস, অবকাঠামো তহবিল, অবকাঠামো বন্ড ও অন্যান্য আর্থিক উপাদানের ওপর জোর দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বেসরকারি খাত বাধাগ্রস্থ হলে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হবে। এছাড়া তিনি প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তির করমুক্ত আয়সীমা না বাড়ায় উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ করদাতারা অস্বস্তিতে পড়বেন বলে মনে করেন। প্রস্তাবিত বাজেটে স্বল্প আয়ের ব্যবসায়ীদের জন্য থোকভিত্তিক করব্যবস্থা প্রবর্তন করা, আয় অনুসারে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করে পৃথক করকাঠামো গঠন এবং আয় অনুসারে কর ছাড়ের বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত থাকার পাশাপাশি নতুন উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ সুবিধার ব্যবস্থা থাকলে নতুন ও তরুণ উদ্যোক্তারা ব্যবসা ও শিল্প স্থাপনে আগ্রহী হতো বলে রংপুর চেম্বারের পক্ষ থেকে তিনি মনে করেন। তাই বিষয়টি রংপুর চেম্বারের পক্ষ থেকে তিনি সংশোধিত বাজেটে অন্তর্ভূক্ত করার অনুরোধ জানান। তিনি প্রস্তাবিত বাজেটে অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসী পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বৃদ্ধি করার পাশাপাশি মেড ইন বাংলাদেশ পণ্যে কর অব্যাহতি থাকায় অটোমোবাইল, থ্রি হুইলার, ফোর হুইলার, হোম অ্যাপ্লায়েন্স ও হাল্কা প্রকৌশল শিল্পের বিকাশ ঘটবে বলে মনে করেন। এছাড়া খেলাপি ঋণ কমাতে করারোপ, সমুদ্রগামী জাহাজের আয় করমুক্ত, সব রপ্তানি খাতে একই হারে কর, পাশাপাশি কর জাল বাড়াতেও টিআইএনের (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর) রিটার্ন জমা শ্লিপ বাধ্যতামূলক করার মত বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি বহুগুণে ত্বরান্বিত হবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জন, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ব্যাপক পরিকল্পনা থাকলেও সারাদেশে প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বাড়লেও রংপুর বিভাগে এখনো দারিদ্র্যতা বাড়ছে। তাই রংপুর চেম্বার এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া রংপুর অঞ্চলের দারিদ্র নিরসন ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে রংপুর বিভাগের জন্য পোশাক ও কৃষি ভিত্তিক শিল্প জোন গড়ে তোলাসহ উন্নয়ন বৈষম্য দূরীকরণে রংপুর বিভাগের আট জেলার উন্নয়নে বিশেষ বরাদ্দ রাখার পাশাপাশি এ বিভাগের শিল্পায়নে আলাদা ঋণ, কর ও ভ্যাট নীতি প্রণয়ন, রংপুরে প্রস্তাবিত স্পেশাল ইকোনমিক জোন ও উত্তরাঞ্চলের উন্নয়নের স্বার্থে ‘নর্থ বেঙ্গল ডেভেলপমেন্ট মিনিস্ট্রি’ গঠনের মত বিষয়গুলো অর্ন্তভূক্ত থাকা উচিত ছিল বলে মনে করেন। তিনি বলেন, বাজেটে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া রংপুর বিভাগের ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পায়নের জন্য তেমন কোন সুযোগ-সুবিধা ও অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব নেই। তাই তিনি রংপুর অঞ্চলের দারিদ্র্য নিরসন ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে রংপুর চেম্বারের প্রস্তাবগুলো সংশোধিত বাজেটে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য বাংলাদেশের সফলতম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পরিশেষে রংপুর চেম্বারের সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু বলেন, বাজেটের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সমূহ অর্জনের নিমিত্তে বেসরকারী বিনিয়োগে প্রাণ ফেরানো, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখাসহ আঞ্চলিক বৈষম্য নিরসনে সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা, পন্থা, অর্থের সুষম বণ্টন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক কর্মসূচি ও কৌশল এমনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে যাতে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং দারিদ্র বিমোচন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে ইতিবাচক সুফল বয়ে আনতে পারে। তিনি প্রস্তাবিত বাজেটের সঠিক বাস্তবায়নে দুর্নীতি প্রতিরোধ, অর্থ পাচার রোধ এবং প্রবৃদ্ধির সুফল যেন সুষমভাবে বন্টন হয় সেদিকে নজর দেয়ার জন্য সরকারের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করেন।