সিলেট, (এবিসি ওয়ার্ল্ড নিউজ ২৪.কম ) : সিলেট ও সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে। বাড়ছে কুশিয়ারা নদীর পানি। দুই জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি এখনও। নগর ও জেলার বাসাবাড়ি ও রাস্তাঘাটসহ প্লাবিত এলাকার বেশিরভাগ এখনও পানির নিচে রয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় মানুষের দুর্ভোগ দীর্ঘায়িত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, রোববার সন্ধ্যা থেকে আজ সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে ৪ সেন্টিমিটার কমেছে। একই সময়ে কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৭ সেন্টিমিটার, শেওলা পয়েন্টে ৪ সেন্টিমিটার এবং অমলশিদ পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার বেড়েছে।
সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে বিপদসীমার ৫২ সেন্টিমিটার, কানাইঘাট পয়েন্টে ১১৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে, কুশিয়ারা নদীর অমলসিদ পয়েন্টে ১৮৬ সেন্টিমিটার, শেওলা পয়েন্টে ৬৭ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলা, ৫টি পৌরসভা পুরোপুরি ও সিটি করপোরেশনের ৮০ ভাগ এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি রয়েছে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ। আড়াই লাখ মানুষকে উদ্ধার করে জেলার পাঁচ শতাধিক আশ্রয়কেন্দ্রে তোলা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত ৬১২ মেট্রিকটন চাল, ৭ হাজার ৯শ’ প্যাকেট শুকনো খাবার, ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। আরও ৮ হাজার ১১৮ প্যাকেট শুকনো খাবার এবং নগদ এক কোটি টাকা মজুত রয়েছে।
সুনামগঞ্জের আরও এক কোটি টাকা এবং ৮ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মোবাইল যোগাযোগ না থাকায় সেখানে বিতরণের পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।
সিলেট জেলায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও অন্যান্য ইউনিটের সহায়তায় ২ লাখ ৩০ হাজার ৬৩২ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছেছেন। রোববার আরও অর্ধলক্ষ মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও প্রায় ৫০ হাজার গবাদিপশু উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি জানান, বন্যা দুর্গত এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা দিতে ১৪০টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। চারটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ওয়াটার প্ল্যান্টের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আড়াই লাখ পিস পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করা হয়েছে।
সেনাবাহিনীর গণমাধ্যম শাখার কর্মকর্তা মেজর হাসিব জানান, সিলেটের বন্যাদুর্গত মানুষদের উদ্ধারে সেনাবাহিনীর প্যারাকমান্ড ইউনিটসহ ১৩টি ব্যাটালিয়নের ২৩ প্লাটুন সদস্য সিলেট ও সুনামগঞ্জে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। ৬০টি নৌকার সাহায্যে উদ্ধার কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত ৬ হাজারের বেশি মানুষকে তারা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। জেলা প্রশাসক জানান, নৌবাহিনীর একশ’ সদস্য ১২টি নৌকা নিয়ে সুনামগঞ্জে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে।
সুনামগঞ্জে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় পানিবন্দি মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। বিমানবাহিনীর সহায়তায় গতকাল রোববার থেকে ওই অঞ্চলে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। পানি কমতে শুরু করায় দুর্গত এলাকায় নৌকাযোগে পৌঁছে প্রশাসন ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবি সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সরবরাহ করা হচ্ছে।