বেনাপোল, (এবিসি ওয়ার্ল্ড নিউজ ২৪.কম ) : স্বপ্নের পদ্মা সেতু দেখতে-দেখতে আজ পরিবহনযোগে রাজধানী যাচ্ছেন বেনাপোলসহ ভারত থেকে আগত যাত্রীরা। তাদের আবেগ ও চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে পরিবহন ব্যবসায়ীরা এ রুটে গাড়ি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গত এক সপ্তাহ আগেও তারা সিদ্ধান্ত হীনতায় ছিলেন।
বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হয়েছে পরশু। গতকাল থেকে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে যানবাহন চলাচলের জন্য। বেনাপোলসহ ভারত থেকে আগত পাসপোর্ট যাত্রীরা সড়ক পথে এতোদিন পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া হয়ে রাজধানীতে যেতেন। সড়ক পথে এটি ছিল প্রধান মাধ্যম। মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টে পদ্মার উপর স্বপ্নের সেতু নির্মিত হওয়ায় এখন এ অঞ্চলের মানুষের ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত সহজ হবে। বেনাপোল থেকে মাত্র সাড়ে চার ঘণ্টায় যাওয়া যাবে রাজধানী ঢাকায়। এতে একদিকে যেমন ভোগান্তি কমবে, তেমনি ব্যয়ও সাশ্রয় হবে।
কিন্তু সাধারণ মানুষের পদ্মা সেতু দেখতে-দেখতে ঢাকায় যেতে অপেক্ষা বাড়ার আশংকা ছিল। কারণ এ জেলার পরিবহন মালিকরা পুরনো দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটেই গাড়ি চালানোর কথা ভাবছিলেন। নতুন রুট মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টের পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচলের সিদ্ধান্ত ছিল না। কিন্তু জনমানুষের আবেগ ও চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে কিছু-কিছু পরিবহন এ রুটে চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মালিকরা। এ খবরে উচ্ছ্বসিত বেনাপোলসহ যশোরবাসী।
ভারত থেকে আসা নারায়ণগঞ্জের পাসপোর্টযাত্রী শংকর কুমার সাহা বলেন, আমি এক সপ্তাহ আগে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া দিয়ে এসেছিলাম। ঘন্টা দুয়েক ঘাটে আটকে ছিলাম। আজ ভারত থেকে ফিরে শুনেছি পদ্মা সেতু দিয়ে গাড়ি যাবে। আমি সাথে-সাথে টিকিট কেটে নিয়েছি। স্বপ্নের সেতু দেখতে-দেখতে বাড়ি পৌছে যাবো।
একই কথা বললেন, ঢাকার তাঁতী বাজারের অমলেশ সরকার। তিনি বলেন, আমিও পদ্মা সেতু দিয়ে বাড়িতে যাওয়ার জন্য সোহাগ পরিবহনে টিকিট কেটেছি। ভারতে বসে টিভির পর্দায় পদ্মা সেতু উদ্বোধনের অনুষ্ঠান দেখেছি। আবেগ ধরে রাখতে পারেনি।
টঙ্গীর আবুল কালাম জানান, আমি আগেই শুনেছিলাম ২৫ তারিখ উদ্বোধন হবে পদ্মা সেতু। একদির পর খুলে দেয়া হবে যান চলাচলের জন্য। সে কারণে আমি আজ ফিরলাম ভারত থেকে। ঢাকায় যবো বাসে চড়ে স্বপ্নের সেতুর উপর দিয়ে। এর চেয়ে আনন্দের আর কি আছে।
বেনাপোলের সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, আমি বেনাপোল-ঢাকা ট্রেনে যাওয়া-আসা করি। ট্রেনেও ৬ ঘন্টা লাগে। পদ্মা সেতু হয়ে যাওয়ার জন্য গ্রীনলাইনের এসিতে যাচ্ছি। রাতের আলোতে পদ্মা সেতু দেখতে দেখতে ঢাকায় পৌঁছে যাবো। সময় লাগবে মাত্র সাড়ে ৪ ঘন্টা।
যশোরের ঈগল পরিবহনের সত্ত্বাধিকারী পবিত্র কাপুড়িয়া বলেন, আমাদের নন এসি পরিবহনগুলো নড়াইল হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচল করবে। আপাতত ৫৫০/- টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া অন্য পরিবহনগুলোও চলাচল শুরু করছে আজ থেকে।
সোহাগ পরিবহনের বেনাপোল ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম জানান, রোববার থেকে ৪টি করে পরিবহন পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা উদ্দেশ্যে গেছে। এরমধ্যে একটি নন এসি ও তিনটি এসি বাস চলবে। তিনি বলেন, বেনাপোল-যশোর হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা দিয়ে পদ্মা সেতু পার হবে পরিবহনগুলো। কেননা নড়াইলের কালনা সেতু চালু না হওয়ায় এই বিকল্প ব্যবস্থা।
গ্রীনলাইনের ম্যানেজার সুব্রত ঘোষ জানান, আমাদের ৫টি এসি পরিবহন বেনাপোল থেকে ছেড়ে যাবে। বেনাপোল থেকে ১৫০০/- টাকা এবং যশোর থেকে ১৩০০/- টাকা দিয়ে যাত্রীরা যেতে পারবেন। আপাতত পরিবহনগুলো ফরিদপুর হয়ে যাবে। এতে মাগুরার কিছু যাত্রী পাওয়া যাবে।
যশোর বাস মালিক সমিতির সভাপতি বদরুজ্জামান বাবলু বলেন, পদ্মা সেতু দিয়ে বাস চলাচল করলে জ¦ালানি খরচ কমবে। আজ থেকে কিছু পরিবহন পদ্মা সেতু হয়ে চলাচল শুরু করছে। কালনা সেতু চালু হলে পূর্ণাঙ্গভাবে সবাই চলাচল করবেন। তবে এখনও রুট চালু না হওয়ায় যশোর বেনাপোলের মানুষ এখন পরিপুর্ণভাবে পদ্মা সেতুর সুফল পাচ্ছে না।
বেনাপোল আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক আনু বলেন, পদ্মা সেতুকে ঘিরে বেনাপোল বন্দরসহ যশোরের অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে। এখান থেকে আমদানিকৃত পণ্যের পাশাপশি সব ধরণের উৎপাদিত পণ্যে সহজে ঢাকাতে পৌঁছাবে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে কালনা সেতুর উদ্বোধন হবে। ততোদিন যশোর থেকে মাগুরা হয়ে ফরিদপুর দিয়ে শরীয়তপুরের জাজিরা দিয়ে রাজধানীতে পৌছাবে যাত্রীরা।