চট্টগ্রাম, (এবিসি ওয়ার্ল্ড নিউজ ২৪.কম) : চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বলেছেন, বিদেশে ৬ বছর নির্বাসন শেষে বঙ্গবন্ধু তনয়া দেশরত্ম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজকের এই দিনে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরেছিলেন বলেই আজ বাংলাদেশ রাহুমুক্ত হতে পেরেছে।
আজ বুধবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবস্থ বঙ্গবন্ধু হলে শেখ হাসিনার ৪২তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালন উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তারা একথা বলেন।
ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী বলেন, স্বৈরাশাসক জিয়াউর রহমান চাননি শেখ হাসিনা দেশে ফিরুক। সেদিন বৃষ্টি¯œাত কুমির্টোলা বিমান বন্দরে ১২ লক্ষ মানুষ শেখ হাসিনাকে বরণ করে নিয়েছিল। মা-বাবা, ভাই, আত্মীয়-স্বজন ছাড়া শেখ হাসিনা বেদনা-বিষাদ ভুলে শোককে শক্তিতে পরিণত করে দেশ ও জাতির হাল ধরেছিলেন। তিনি আজ শুধু একটি দেশের কর্ণধার নয়, বিশ্বের একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক। তাই তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনটি আমাদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
তিনি আরো বলেন, দীর্ঘ ২১ বছর নানার প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটাধিকারে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসার পরপরই তিনি কুখ্যাত ইন্ডেমনিটি অধ্যাদেশটি বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচার শুরুর মাধ্যমে জাতিকে দায়মুক্তির লড়াই শুরু করেন। এই ইন্ডেমনিটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান খুনিদের বিচার তো দূরের কথা বরং তাদের পুরস্কৃত করে ইতিহাসকে কলংকিত করেছেন। এই কলংকের দাগ নিয়ে জিয়াউর রহমানকে প্রাণ দিতে হয়েছে। এটাই তার জন্য অনিবার্য পরিণতি ছিল।
তিনি উল্লেখ করেন, এখনো নানাভাবে ষড়যন্ত্র চলছে, অবৈধ পথে ক্ষমতা দখলের জন্য নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। বিএনপি-জামাত চক্রের আন্দোলন সংগ্রামে জনগণের স্বার্থ অধিকার রক্ষার কথা নেই। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, যে কোনভাবে ক্ষমতায় গিয়ে এই দেশকে লুটেরাদের রাজ্যে পরিণত করা। এটা কিছুতেই হতে পারে না এবং হতে দেব না।
সভায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী সময়ে দেশ ও জাতি অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছিল। ইতিহাসের উল্টো যাত্রায় বাংলাদেশ পরিচালিত হচ্ছিল পাকিস্তানি ভাবধারায়। সেসময় আওয়ামী লীগকে নানাভাবে নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। ’৭১ এর পরাজিত শক্তিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে, পুনর্বাসিত করে এদেশে মধ্যযুগীয় বর্বরতায় আচ্ছন্ন করে রাখা হয়েছিল। এদেশে সব ধরণের অপকর্ম দুর্নীতি, লুটপাট চলছিল অবাধে। রাজনীতি ও অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়নে বাংলাদেশ বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছিল। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য শেখ হাসিনা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরে এসেছিলেন। তার অনুপস্থিতিতে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি সেদিন দিশেহারা আওয়ামী লীগের জন্য হাল ধরার একমাত্র বিশস্ত ও আস্থাভাজনের প্রতীক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ কোথায় ছিল, আর এখন কোথায় আছে – একবার ভেবে দেখলে অবশ্যই অকপটে স্বীকার করতে হবে একমাত্র শেখ হাসিনার কারণেই সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়াবার শক্তি ও হিম্মত প্রতিষ্ঠায়। আজ একথাও সত্য যে, যারা বাংলাদেশ চায়নি এবং এখনো তারা বাংলাদেশকে ধাক্কা দিয়ে পিছনের দিকে ঠেলে দিতে চায়। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার জন্য এরা শুধু মিথ্যাচারই নয়, নানাভাবে ও নানা কৌশলে ষড়যন্ত্রের জাল বুনে এদেশকে আবারো পাকিস্তান বানানোর স্বপ্ন দেখছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি একটি মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী শক্তি কখনো পরাভব মানে না। আওয়ামী লীগ ও পরাভব মানে না। আমাদের শক্তির উৎস জনগণ। জনগণ যখন আওয়ামী লীগকে রায় দিয়েছে তখন আওয়ামী লীগ জনগণের সাথে বেঈমানি করেনি এবং তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী শাসনামলে যেই উন্নয়ন ও সফলতা অর্জিত হয়েছে তা নজিরবিহীন। আজ সারা বিশ্ব বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার বিস্মিত। একটি দরিদ্র দেশ আজ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। ভিখিরির হাত কর্মীর হাতে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফর সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে নতুনভাবে চিনিয়েছে। আইএমএফ ও বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশের প্রসংশায় পঞ্চমুখ। তারাও জোর দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশের স্বার্থে ও জনগণের সার্বিক কল্যাণে শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই।
তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা যদি দলকে ভালবাসি, দেশকে ভালবাসি তাহলে জনগণের সাথে মিলে মিশে থাকতে হবে। তাদের সুখে-দুঃখের সাথী হতে হবে। বিশ্বাস ও আস্থার প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত হতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশ বাঁচবে, আওয়ামী লীগ বাঁচবে এবং এদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে। আমরা একদিন উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে পরিণত হবো ইনশাআল্লাহ।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আলহাজ শফিকুল ইসলাম ফারুকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নঈম উদ্দীন চৌধুরী, এড. ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, আলহাজ খোরশেদ আলম সুজন, এম. জহিরুল আলম দোভাষ, আলহাজ আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, উপদেষ্টা শেখ মো. ইছহাক, চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, দপ্তর সম্পাদক হাসান মাহমুদ শমসের, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক চন্দন ধর, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আবু তাহের প্রমুখ।
সভার শুরুতে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্যকন্যা দেশরত্ম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
অনুষ্ঠানে এছাড়াও, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য সদ্যপ্রয়াত অমল মিত্রর প্রয়াণে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।