নাটোর,(এবিসি ওয়ার্ল্ড নিউজ২৪.কম): উদয় চক্রবর্ত্তী সমাপ্তি চক্রবর্ত্তীর ঘরে আনন্দ সুর হয়ে এসেছে হারমোনিয়াম। আজ শনিবার বেলা ১১টায় জন্ম থেকে অন্ধ এ দম্পতির হাতে কাংখিত হারমোনিয়াম তুলে দেন নাটোর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সারমিনা সাত্তার। উদয় চক্রবর্ত্তী নাটোরের হালসা এলাকার বাসিন্দা। জন্মান্ধ উদয় বোনের কাছেই মানুষ হয়েছেন। গান শিখেছেন রাজশাহীর ওস্তাদ অনুপ সরকারের কাছে। ফরিদপুরের জন্মান্ধ সমাপ্তি রায়ের ছোটবেলা থেকেই গানই জীবন। হাতেখড়ি পড়াশোনার চেয়ে গানেই বেশী। প্রায় ৪০ বছর ধরে গেয়ে যাচ্ছেন রবীন্দ্র সংগীত, আধুনিক আর লালন। বাংলাদেশ বেতার, ঢাকার তালিকাভূক্ত রবীন্দ্র সংগীত আর লালন শিল্পী।তিনবার তিনি জাতীয় সংগীত সম্মিলন পরিষদের রবীন্দ্র সংগীত প্রতিযোগিতায় দেশ সেরা, একবার খেলাঘর আসরের। শহরের চকরামপুর এলাকার এক চিলতে ভাড়া বাসা সংগীত প্রতিযোগিতায় প্রাপ্ত পুরষ্কারে ঠাসা। তালিম নিয়েছেন দেশ বরেণ্য মিতা হক ও রেজাউল করিম এবং ফরিদপুরের করুনাময় অধিকারীর কাছে।
উদয় চক্রবর্ত্তী কাজ করতেন জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সংস্থায়। সংস্থার প্রধান মিনহাজ উদ্দিন সংগীত পাগল দুই জন্মান্ধ উদয় চক্রবর্ত্তী আর সমাপ্তি রায়ের মধ্যে মেলবন্ধন তৈরী করে দেন। এভাবেই চলছে একসাথে পথচলা।
জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সংস্থার নাটোর জেলার কার্যক্রম এখন বন্ধ। তাই উদয় চক্রবর্ত্তী এখন কর্মহীন। তবে দুইজনই পান প্রতিবন্ধী ভাতা। সমাপ্তি চক্তবর্ত্তী পান সরকারের বাৎসরিক সাংস্কৃতিক ভাতা। এখন এ হারমোনিয়াম হয়ে উঠবে উপার্জনের অবলম্বন। তবে সমাপ্তি চক্রবর্ত্তীর প্রত্যাশা, কোন প্রতিষ্ঠানে সংগীত প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পেলে তা হবে অনেক প্রশান্তির।
অন্ধ দম্পতির নেশা আর পেশার প্রয়োজনে একটা হারমোনিয়াম প্রদানের পরিকল্পনা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। এ খবর জানতে পেরে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক শ্যাম সুন্দর আগরওয়ালা এবং বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশন নাটোর জেলা শাখার সদস্য সচিব রঘুনাথ কর্মকার। বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী সুজাউল হামিদের তত্ত্বাবধানে তৈরী করা হয় বিশেষ হারমোনিয়ামটি।
শ্যাম সুন্দর আগরওয়ালা বলেন, এ ধরণের সহযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারায় ধন্য মনে করছি।
রঘুনাথ সরকার বললেন, মানুষের সেবাই পরম ধর্ম। সহযোগিতায় অংশগ্রহণ অনেক প্রশান্তির।
এ দম্পতিকে আবরণসহ লেপ প্রদানকারী ‘আমার হৃদয়ে নাটোর’ এর যুগ্ম আহ্বায়ক জুলফিকুল হায়দার বাবু বলেন, আমরা সব সময় এ দম্পতির পাশে আছি, যে কোন প্রয়োজনে।
নাটোর প্রেসক্লাবের সভাপতি ফারাজী আহম্মদ রফিক বাবন হারমোনিয়াম প্রাপ্তির পরে অন্ধ দম্পতির আনন্দ অনুভূতিতে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন, নিভৃতে থাকা অন্ধ দম্পতিকে খুঁজে বের করে তাদের কর্মসংস্থানের একটা উপায় তৈরী করে দেওয়ার এ বোধ অনন্য। কল্যাণ হোক সকলের।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সারমিনা সাত্তার বলেন, সংগীত শিল্পী এ দম্পতির জন্যে একটা হারমোনিয়ামের বড্ড প্রয়োজন ছিলো। এ যন্ত্রটা তাদের গানের নেশায় সহায়ক হবে। পাশাপাশি, গান শিখিয়ে উপার্জনেরও একটা উপায় হয়ে উঠবে বলে আমার বিশ্বাস। চোখের আলো না থাকুক, মনের আলো জ্বেলে হারমোনিয়াম সাথে নিয়ে আনন্দ সুরে দিন কাটুক এ দপ্ততির।
আগামীতে এ দম্পতির প্রত্যাশিত হালসা এলাকাতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে আবাসনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও প্রদান করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।