“আওরঙ্গজেব কামাল”
(এবিসি ওয়ার্ল্ড নিউজ ২৪ ডটকম) :
বাংলার দামাল ছেলে আবাও নিজের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ কে আবাও স্বাধীন করেছে। একটি নতুন সরকারও গঠন হয়েছে। চলছে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ। তারই ধারাবাহিকতা শুরু হয়েছে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতায়। বর্তমানে সাংবাদিকরা কতটুকু স্বাধীনতা ভোগ করছে এ প্রশ্ন এখন সকল সাংবাদিকদের মধ্যে ঘুর পাক খাচ্ছে। বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে সংবাদমাধ্যমের বিকাশ ঘটেছে কিন্তু সাংবাদিকদের বা গণমাধ্যমের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে যখন যে সরকার এসেছে তখন সে সরকার সাংবাদিকদের বা গণমাধ্যম নিজেদের সূবিধার্থ ব্যবহার করেছে। ফলে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকরা সব সময় পড়েছে চরম বিপাকে। বিগত সরকার গুলির সময় সাংবাদিকদের অবস্থা ছিল (জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ) পক্ষে গেলে বিপদ না গেলেও বিপদ। যে কারনে সাংবাদিকরা বর্তমানে নানাবিধ প্রশ্নের মুখে রয়েছে। গত ৫৩ বছরে বিভিন্ন সরকারের নানা ধরনের আইন জারি ও হস্তক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি, দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয়নি। গত আওয়ামীলীগ সরকারের ১৫ বছরে এ নির্যাতন সব সীমা ছাড়িয়ে যায়। কার্টুন প্রকাশ ও কঠোর সমালোচনামূলক রিপোর্ট ও নিবন্ধ প্রকাশ বন্ধ করতে বাধ্য হয় গণমাধ্যম। সমালোচনামূলক রিপোর্ট ও নিবন্ধ প্রকাশের জন্য রিপোর্টার ও নিবন্ধ লেখকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করা হয়েছে কটূক্তি বা অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট অনুসারে ফাইল চুরির অপরাধে। সচিবালয়ে সাংবাদিককে কয়েক ঘণ্টা আটকে রেখে পুলিশে সোপর্দ করেন সরকারি কর্মকর্তারা-এমন ন্যক্কারজনক ঘটনাও ঘটেছে।ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে সামাজিক সাইটে সরকারের বিপক্ষে পোস্ট আপলোড করার জন্য গ্রেফতার, মামলা ও রিমান্ডের শিকার হয়েছেন অনেকেই। বাংলাদেশের সংবিধান ভাবে সাংবাদিকদের মৌলিক অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সুস্পষ্টভাবে থাকলেও বাস্তব চিত্র উল্টো। যখন যে সরকার আসে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য জোর চেষ্টা চালায়। সদ্যগত হওয়া আওয়ামীলীগ সরকার গণমাধ্যম কে বিভিন্ন আইনের জালে বেঁধে চালায় কঠোর নির্যাতন। নতুন নতুন আইন কানুন পাস করে সাংবাদিকতার সকল খাতগুলোকে আটকে দেওয়া হয়। মাঠের সাংবাদিকদের ‘স্থবির’ করা হয়। মিডিয়ার স্বাধীনতা থাকে লাইভ সাপোর্ট। ১৯৯০-পরর্বতী গণতান্ত্রকি যুগরে সূচনায় বাংলাদশেরে গণমাধ্যমকাঠামো, বষিয়বস্তু ব্যবহার ও মালকিানায় নানা পরর্বিতন দখো যায়। নতুন প্রযুক্তরি আবর্ভিাব ও বশ্বিায়নরে অনস্বীর্কায প্রভাবে এ দশেরে সংবাদমাধ্যমও প্রভাবতি হয়ছে। সংবাদমাধ্যমের উল্লম্ফন হলেও নিয়ন্ত্রিত বাজার ও করপোরেট পুঁজির প্রভাব, রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং রাষ্ট্রীয় নানা আইনি ও নীতিকাঠামো এবং এর ফলস্বরূপ ‘সেলফ সেন্সরশিপ’-এর মতো নানা চ্যালেঞ্জের কারণে পেশাদার ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার চর্চা নিবিড় হয়নি। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় নানা আইনি ও নীতিকাঠামো বর্তমানে সংবাদমাধ্যম ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য বিশেষ প্রতিবন্ধক হয়ে আছে। এসব আইন যেকোনো সময় যেকোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ব্যবহারের হুমকি সাংবাদিকতার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪, অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ১৯২৩, এবং পেনাল কোড ১৮৬০-এর বিভিন্ন ধারা অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের উদাহরণ আছে। এসব আইনে ব্যক্তির মানহানি, মিথ্যা তথ্য প্রকাশ, রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা লঙ্ঘন কিংবা ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্ষতিকর বিবেচনায় মামলা করার সুযোগ আছে। বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে বহু বছর ধরেই কথা হচ্ছে । হয়েছে নানা আলোচনা সমালোচনা কিন্তু কোন প্রতিকার আমরা আজও পাইনি। সাংবাদিকদের হয়রানি-নির্যাতন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের জন্য পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপ হয়েছিল। এমন পরিস্থিতি গত ৫ আগস্ট দেশে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারের পরিবর্তন হয়। তারপর থেকে নানা মহলে পরিবর্তনের পাশাপাশি সাংবাদিকতায় ও পরিবর্তনের কথা ওঠে। এখনো সাংবাদিকরা হামলা ও মামলার শিকার হচ্ছে। মামলার ফয়ে সাংবাদিকরা আতœঙ্কে রয়েছে। নতুন সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের এক মাস উপলক্ষে বাংলাদেশ মিডিয়া মনিটর সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতার ওপর একটি জরিপ চালিয়েছে। কতটা স্বাধীনভাবে তারা কাজ করতে পারছে বা আগের মতই পরিস্থিতি আছে কি না এটা জানতে চাওয়া হয়েছিল ৭৮ জন সংবাদকর্মীর কাছে। এই ৭৮ জন সংবাদকর্মীর মধ্যে ২৪ জন ছিলেন টেলিভিশন সাংবাদিক, ১৫ জন নিউজ পোর্টাল, ২১ জন সংবাদপত্রের, ২ জন্য ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও ১ জন বার্তা সংস্থার। অংশগ্রহণ করাদের ৬২.৮ শতাংশ ছিল প্রতিবেদক। এ ছাড়া ২০.৫ শতাংশ ছিল বার্তাকক্ষে কাজ করা সংবাদকর্মী। ফটো/ভিডিও সাংবাদিক ছিলেন ৪১.১ শতাংশ। কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ছিল ২.৬ শতাংশ। অংশ গ্রহণাকারীদের কাছে প্রশ্ন ছিল ৫ আগস্টের পর দেশের সাংবাদিকতায় পরিবর্তন এসেছে বলে আপনি মনে করেন কিনা? পরিবর্তন হওয়ার পক্ষে সমর্থন দিয়েছে ৫১.৩ শতাংশ সাংবাদিক আর কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে মনে করেন এখনও ৪৮.৭ শতাংশ সাংবাদিক। পরিবর্তনের জায়গাগুলো নিয়ে ২/১ জন সাংবাদিকের সাথে কথা বলতে গিয়ে জানা যায়, তারা কোন বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছে না। নিজেদের মতো কাজের সুযোগ পাচ্ছেন। এর বিপরীতে থাকা ২/১ জন সাংবাদিক দাবি করেছেন, তারা বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছেন। ছবি/ভিডিও ধারণের ক্ষেত্রে বেশি বাঁধা রয়েছে। সংবাদ সংগ্রহের সময় এখনো আতংকিত সাংবাদিকরা। আরেকটি প্রশ্ন ছিল কাজের স্বাধীনতা কেমন? সেখানে ৫৮.৪ শতাংশ জানিয়েছেন আগের চেয়ে কাজের স্বাধীনতা ভালো। তবে ৩১.২ শতাংশ সাংবাদিক বলছেন, সাংবাদিকদের স্বাধীনতা আগের মতই। ৭.৮ শতাংশ সাংবাদিক মনে করেন, কাজের পরিস্থতি আগের চেয়ে খারাপ। এছাড়া ১.৩ শতাংশ সাংবাদিক মনে করেন, কিছু ক্ষেত্রে স্বাধীন কিছু ক্ষেত্রে আগের চেয়েও খারাপ। কিছুটা লেখার স্বাধীনতা মিলেছে বলেও মনে করেন আরও ১.৩ শতাংশ সাংবাদিক। তবে হ্যা/না এ উত্তর দেওয়ার জন্য আরেকটি প্রশ্ন ছিল। যেখানে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজের সুযোগ পাচ্ছে কি না? যার পক্ষে মানে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারার সুযোগ পাবার পক্ষে ছিলেন ৫৩.৯ শতাংশ আর বিপক্ষে ছিলেন ৪৬.১ শতাংশ। তবে সব প্রশ্নগুলোর উত্তর পজেটিভের শতাংশ বেশি থাকলেও, নেগেটিভ ছিল সংবাদ সংগ্রহের বিষয়টিতে। প্রশ্ন ছিল সংবাদ সংগ্রহে এখনও আতংক কাজ করে কিনা? সেখানে ৫৫.১ শতাংশ সাংবাদিক জানিয়েছেন তারা সংবাদ সংগ্রহের সময় এখনও আতংকিত থাকেন। আর আতংক কাজ করে না এমন সাংবাদিকের সংখ্যা ৪৪.৯ শতাংশ। সত্য বড় কঠিন। আর সত্য কখনো কখনো অনেকেরই অসহ্য। আবার বলা হয়ে থাকে, সাংবাদিকদের কোনো বন্ধু নেই। স্বাভাবিকভাবেই সাংবাদিকদের দেওয়া তথ্যে কেউ উপকারভোগী, কেউ আক্রান্ত। ট্র্যাজেডি হচ্ছে, উপকারভোগীরাও এই উপকারের কথা তেমন মনে রাখেন না। আর আক্রান্তরা তো প্রতিপক্ষ ভেবে মারধর, গালমন্দসহ যা ইচ্ছা করে বসেন। কোটা আন্দোলন ঘিরে এক-একটি ঘটনায় তা টাটকাভাবে আবারও প্রমাণিত। কোটা আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে সাংবাদিকরা পুলিশের হামলায় পড়েছেন। সরকারপক্ষের কাছেও সাংবাদিকরা প্রতিপক্ষ। আন্দোলনকারীরাও কোথাও কোথাও নিপীড়ন করেছেন সাংবাদিকদের। মানে সাংবাদিকরা কারও বন্ধু নন। তারাও কারও বন্ধু নন। এক অবর্ণনীয় অবস্থায় গণমাধ্যমকর্মীরা। রীতিমতো পেয়ে বসার মতো অবস্থা। তার মানে কি পক্ষ-বিপক্ষের মানুষ, পুলিশ, রাষ্ট্র, ক্ষমতাসীন সবার কাছেই তথ্য ও সত্য বড় কঠিন? সাংবাদিকরা ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করুক, চিত্র ধারণ করুক তা অসহ্য নানা মহলের কাছে? কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনটি সরকারের অবহেলা ও অদূরদর্শিতায় সহিংসতার দিকে গেলে রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় সাংবাদিকরা আক্রমণের শিকার হন। এরই মধ্যে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুও হয়েছে একাধিক সাংবাদিকের। কোনো কোনো হামলা বা আক্রমণের ধরন বলছে, গণমাধ্যমকর্মীরা পরিকল্পিত আক্রমণের টার্গেট। তা একেবারে না বোঝে, না জেনে বা ঝোঁকের মাথায় ঘটেছে এমনটি মনে করার অবস্থা নেই। বেশ কিছু টেলিভিশন চ্যানেলের গাড়িও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। একবাক্যে বলা যাচ্ছে না এসব ঘটনার হোতা বা কুশীলব কারা? এবার কেন প্রায় প্রতিদিনই গণমাধ্যমকর্মীরা আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন, হচ্ছেন? প্রশ্নটা বড় রকমের ভাবনা এবং উদ্বেগের বিষয়। এ নিয়ে কিছু কথাবার্তা হচ্ছে। গণমাধ্যমগুলো আন্দোলনকারী, আন্দোলন দমনকারী, সরকার সবারই প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে কেন? সংকটকালে পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে পারছেন না? এ ধরনের নিষ্পত্তিহীন প্রশ্নের সঙ্গে অসমাপ্ত কথামালাও প্রচুর। আছে কিছু আত্মসমালোচনাও। আর সীমাবদ্ধতা তো আছেই। নিদারুণ বাস্তবতা হচ্ছে, সত্য-মিথ্যা বড় আপেক্ষিক হয়ে গেছে। যে তথ্য কারও কাছে সত্য বা উচিত কথা, তা-ই আরেক পক্ষের কাছে অসত্য-অনুচিত। পেশাদার সাংবাদিকদের জন্য এই পরিস্থিতি একটা আপদের মতো। কখনো কখনো আপদের ওপর বিপদও নেমে আসছে। অবস্থাদৃষ্টে মৌজে আছে সোশ্যাল মিডিয়া। তাদের দায় নেই। দায়িত্বের ধারে-কাছেও না গিয়ে যা ইচ্ছা তা করে চলেছেন তারা। সত্য-মিথ্যা মিশিয়ে, ছবি ও ভিডিও এডিট করে, জোড়াতালি দিয়ে অনেক কনটেন্ট তৈরি করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে গায়ে বাতাস লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তারা। কিন্তু মূলধারার গণমাধ্যম ও কর্মীদের কী দশা! তাদের সম্পাদকীয় নীতিমালাসহ পেশাদারিত্ব মানতে হয়। তা মেনে অভ্যন্তও তারা। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অনেক আইনকানুন, সরকার ও রাজনৈতিক নানাপক্ষের চাপও মোকাবিলা করতে হয় নিয়মিত। নিদারুণ এই বাস্তবতায় তারা জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সঠিক সময়ে সঠিক সংবাদটি জোগান দিতে পারছেন কি না প্রশ্নটি নতুন নয়। এবার বরং তা আরও বেগবান-তেজময়। আবার এক শ্রেণির সাধারণ মানুষের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ার গুজবকে বিশ্বাস করা এবং মূলধারার গণমাধ্যমের কাছেও এ ধরনের খবর দেখার আগ্রহ এবার বেশ লক্ষণীয়। নানা সীমাবদ্ধতা ও বাস্তবতায় গণমাধ্যম চাওয়া মাত্রই নিরপেক্ষ হতে পারে না। সবার সন্তুষ্টির মতো তথ্যের খোরাকও দিতে পারে না। তাকে সব না হলেও অনেক পক্ষকে আমলে রাখতে হয়। তা করতে গিয়ে কোথাও কোনো তথ্যবিভ্রাট হয়ে যাচ্ছে কি না সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হয়। এর পরও জনমানুষের শতভাগ প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তা উদার গণতান্ত্রিক দেশের সাংবাদিকরাও পারেন না। বিশ্বের কোনো দেশের গণমাধ্যমই তার দেশের জনগণের শতভাগ প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে না। এটি নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট দেশের রাষ্ট্রকাঠামো, গণমাধ্যমের ব্যাপারে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি, স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য সাংবিধানিক সুরক্ষা এবং গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের আইন ও নীতিমালার ওপর। তবে কোনো একটি ইস্যুতে একই সঙ্গে সব গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান একই ধরনের আচরণ করবে এমন নয়। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ নিয়েও সব গণমাধ্যমের নিউজ ট্রিটমেন্ট এক ছিল না। কিন্তু এ ধরনের ঘটনায় কোনো দেশেই সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হওয়ার নজির নেই। এমন শাঁখের করাতে পড়তে হয় না ওইসব দেশের সাংবাদিকদের। এরপরও প্রশ্ন থাকতে পারে, বাংলাদেশের সাংবাদিকরা কি আরও পেশাদার হতে পারেন না? পারেন না সবার পক্ষে-বিপক্ষে সমানে তথ্যের দোকান খুলে, দোকান খুলতে? তা পারে না বা করছে না বলে প্রতিপক্ষ ভাবতে হবে সাংবাদিকদের? আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে পেটাতে হবে? টেলিভিশনের গাড়ি জ্বালিয়ে দিতে হবে? এসব প্রশ্নের জবাব হয়তো কখনো মিলবে না। সাংবাদিকদের প্রতিপক্ষ বানিয়ে দেওয়ার এক আচানক সন্ধিক্ষণে পড়েছে বাংলাদেশ। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়া সহিংসতার খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে কেন চার-পাঁচজন সাংবাদিককে প্রাণ দিতে হয়েছে? আহত হয়ে কাতরাতে হচ্ছে ডজনে-ডজনে? কেন কারা গণমাধ্যমের এত গাড়ি ভাঙচুর বা পোড়ানোর দরকার মনে করলেন? সাংবাদিক বা গণমাধ্যমকর্মীরা নিরীহ প্রজাতি বলেই?বিভিন্ন সময়ই সাংবাদিকদের এভাবে পেয়ে বসার নমুনা চলে আসছে। করোনা মহামারীর সময়েও ক্ষমতাবানদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাংবাদিকরা আক্রমণের শিকার হয়েছেন। তথ্য প্রযুক্তি আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সাইবার নিরাপত্তা আইন, অফিশিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্টে অসংখ্য সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অনেকে জেল খেটেছেন। এর বাইরে মানহানির মামলা অহরহ। আর পথে-ঘাটে নাজেহাল-গালমন্দ তো বোনাস পাওনা। সাংবাদিক নাজেহালের এ ধামাকায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে কোটা সংস্কারের দাবি থেকে সরকার পতনের আন্দোলন ঘিরে। কয়েকজন নারী সাংবাদিকও রকমের হেনস্তার শিকার হয়েছেন এবার। বাংলাদেশের কোনো সংবাদমাধ্যম আলাদাভাবে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা-সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। তা জরুরীও নয়। সাংবাদিকদের নিরাপত্তার ধারণাও এখানে স্পষ্ট নয়। শুরু সাংবাদিকদের নামে মামলা ও হামলা করলেই সব ঠিক হয়ে যাবে? সব মিলিয়ে মানুষ গণমাধ্যমের ওপর দিন দিন আস্থা হারাচ্ছে। তাই আমরা চাই স্বাধীন সাংবাদিকতা । মামলা হামলার উদ্ধে থেকে নিরেপেক্ষ ভাবে কাজ করুন নতুন বাংলাদেশের সকল সাংবাদিক।
লেখক ও গবেষক
আওরঙ্গজেব কামাল
সভাপতি
ঢাকা প্রেস ক্লাব
# দয়া করে এই নিউজটা একটু আপনার প্রতীকায় প্রকাশ করুন #