,

উপদেষ্টা পরিষদের ত্রয়োদশ বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ

ঢাকা,(এবিসি ওয়ার্ল্ড নিউজ ২৪ ডটকম): প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বুধবার সচিবালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের ত্রয়োদশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ নিচে দেওয়া হলো:বিষয়-১: ‘The Bangladesh Law Officers (Amendment) Ordinance, 2024’-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন।
উদ্যোক্তা: আইন ও বিচার বিভাগ।
অভিজ্ঞ, দক্ষ ও যোগ্য অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগের মাধ্যমে বিদ্যমান অ্যাটর্নি সার্ভিসকে শক্তিশালী করা আবশ্যক। এ উদ্দেশ্যে The Bangladesh Law Officers Order, 1972-এর আরও সংশোধন সমীচীন ও আবশ্যক।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান-এর অনুচ্ছেদ ৪৮(৩)-এর অধীন সংসদ ভেঙে যাওয়া অবস্থায় রয়েছে এবং অভিজ্ঞ, দক্ষ ও যোগ্য অতিরিক্ত অ্যাটর্নি-জেনারেল ও ডেপুটি অ্যাটর্নি-জেনারেল নিয়োগে আশু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান। এ প্রেক্ষাপটে ‘The Bangladesh Law Officers (Amendment) Ordinance, 2024’ শীর্ষক অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে যা বুধবার উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করা হয়।
বুধবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘The Bangladesh Law Officers (Amendment) Ordinance, 2024’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়েছে।
সম্পূরক বিষয়-১: ‘International Crimes (Tribunals) (Amendment) Ordinance, 2024’-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন।
উদ্যোক্তা: আইন ও বিচার বিভাগ।
গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের আওতাধীন অন্যান্য অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে International Crimes (Tribunals) Act, 1973 প্রণয়ন করা হয়। Rome Statute of the International Criminal Court-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যতা আনা, আন্তর্জাতিক আইনের প্রচলিত বিধানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং এই আইনের বিচারকাজ নিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন কর্তৃক উত্থাপিত বিভিন্ন সুপারিশের আলোকে International Crimes (Tribunals) Act, 1973-এর আরও সংশোধন সমীচীন ও আবশ্যক।
এই প্রেক্ষাপটে আইন ও বিচার বিভাগ কর্তৃক আন্তর্জাতিক অপরাধসমূহের সংজ্ঞা যুগোপযোগীকরণ, অপরাধের দায় নির্ধারণ, অডিও ও ভিডিওর মাধ্যমে বিচারকাজ ধারণ ও সম্প্রচার, বিদেশি কাউন্সেল-এর বিধান, বিচারকালে অভিযুক্তের অধিকার, অন্তবর্তীকালীন আপিল, সাক্ষ্যের গ্রহণযোগ্যতা ও প্রাসঙ্গিকতা সংক্রান্ত বিধান, তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক তল্লাশী ও জব্দ করার বিধান, পর্যবেক্ষক, সাক্ষীর সুরক্ষা, ভিকটিমের অংশগ্রহণ ও সুরক্ষার বিধান সংযোজন করে International Crimes (Tribunals) (Amendment) Ordinance, 2024-এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়।
International Crimes (Tribunals) (Amendment) Ordinance, 2024-এর খসড়া নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগ, দপ্তর, বিশ্ববিদ্যালয়, মানবাধিকার কর্মী, মানবাধিকার সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংস্থা, আন্তর্জাতিক আইনে বিশেষজ্ঞ এবং অংশীজনের সঙ্গে বিভিন্ন সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং তাদের মতামত ও পরামর্শ পর্যালোচনা করে আইন ও বিচার বিভাগ কর্তৃক প্রণীত খসড়ায় সংযোজন ও পরিমার্জন করা হয়েছে।
যেহেতু সংসদ ভেঙ্গে যাওয়া অবস্থায় রয়েছে এবং গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের আওতাধীন অন্যান্য অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের লক্ষ্যে বিদ্যমান আইন যুগোপযোগীকরণের বিষয়ে আশু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান রয়েছে সেহেতু ‘International Crimes (Tribunals) (Amendment) Ordinance, 2024’ শীর্ষক অধ্যাদেশের খসড়া উপদেষ্টা পরিষদের নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘International Crimes (Tribunals) (Amendment) Ordinance, 2024’-এর খসড়া লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং সাপেক্ষে চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়েছে।
সম্পূরক বিষয়-২: ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন।উদ্যোক্তা: লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ।মানবাধিকার সংরক্ষণ, উন্নয়ন এবং মানবাধিকার যথাযথভাবে নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন, ২০০৯ প্রণয়ন করা হয়। ওই আইনের ধারা ৫ অনুযায়ী একজন চেয়ারম্যান, একজন সার্বক্ষণিক সদস্য এবং ৫ জন অবৈতনিক সদস্য সমন্বয়ে মানবাধিকার কমিশন গঠনের বিধান রয়েছে। বিগত ৭ নভেম্বর, ২০২৪ তারিখে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, একজন সার্বক্ষণিক সদস্য ও ৪ জন অবৈতনিক সদস্য পদত্যাগ করেন। মানবাধিকার কমিশনের অপর একজন অবৈতনিক সদস্য বিগত ২২ আগস্ট ২০২৪ তারিখে পদত্যাগ করেন।জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা পদত্যাগ করায় মানবাধিকার কমিশনের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগের লক্ষ্যে সুপারিশের জন্য ওই আইনের ধারা ৭-এর অধীনে জাতীয় সংসদের স্পিকারের সভাপতিত্বে একটি বাছাই কমিটি গঠনের বিধান রয়েছে। বাছাই কমিটিতে জাতীয় সংসদের স্পিকার কর্তৃক মনোনীত একজন সরকার দলীয় এবং অন্য একজন বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য মনোনয়নের বিধান রয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে যাওয়ায় এবং সংসদের স্পিকার পদত্যাগ করায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগের জন্য বাছাই কমিটি সংক্রান্ত বিধান সংশোধন করা প্রয়োজন।এই প্রেক্ষাপটে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগের জন্য বাছাই কমিটির সভাপতির অবর্তমানে বা অনুপস্থিতিতে কমিটির সভায় উপস্থিত সদস্যদের সম্মতিতে যে কোনো সদস্য যাতে সভায় সভাপতিত্ব করতে পারেন, এবং কেবল কোনো সদস্য পদে শূন্যতা বা বাছাই কমিটি গঠনে ত্রুটি থাকার কারণে যাতে এর কোনো কাজ বা কার্যধারা অবৈধ না হয় বা তৎসম্পর্কে কোনো প্রশ্নও উত্থাপন করা না যায় সে সংক্রান্ত বিধান অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে।উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়েছে।সম্পূরক বিষয়-৩: ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ (সংশোধিত ২০২১) বাতিলপূর্বক অধ্যাদেশ জারির নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন।উদ্যোক্তা: বিদ্যুৎ বিভাগ।বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০-এর ধারা-৬ এর অধীনে বিদ্যুৎ উৎপাদন চুক্তি সম্পাদন বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিভাবে বাংলাদেশের বিদ্যুৎখাতে ব্যাপক দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা বিষয়ে জনমনে প্রবল বিরূপ ধারণা তৈরি হয়েছে এবং গত ১৪ নভেম্বর বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ এর ধারা ৬(২) ও ধারা ৯ মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ রিট পিটিশন নং ১০৩৭৮/২০২৪ এর আদেশ দ্বারা অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।এটি বিবেচনায় রেখে জনস্বার্থে স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতামূলক পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ক্রয় ও সরবরাহ নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ রহিতকরণের নীতিগত ও চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ওই অধ্যাদেশের খসড়া লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং সাপেক্ষে  চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়েছে।বিষয়-৩: প্রতিবছর ১৮ ডিসেম্বর তারিখে ‘আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস’ এবং ‘জাতীয় প্রবাসী দিবস’ একসাথে উদ্যাপনের প্রস্তাব অনুমোদন।
উদ্যোক্তা: প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।প্রতিবছর ১৮ ডিসেম্বর ‘আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস’ এবং ৩০ ডিসেম্বর ‘জাতীয় প্রবাসী দিবস’ পৃথকভাবে উদযাপন করা হয়। দিবস দু’টি উদযাপনের উদ্দেশ্য একইধরনের এবং ব্যবধান মাত্র ১২ দিন। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে দিবস দু’টি পৃথকভাবে উদযাপন করা হলে অনেক শ্রমঘণ্টা এবং অতিরিক্ত সরকারি অর্থের প্রয়োজন হয়। দিবস দু’টি একসঙ্গে উদযাপন করা হলে শ্রমঘণ্টা সাশ্রয়সহ সরকারি অর্থের ব্যয় সংকোচন করা সম্ভব হবে।এটি বিবেচনায় করে ‘আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস’ এবং ‘জাতীয় প্রবাসী দিবস’ একই দিনে অর্থাৎ প্রতিবছর ১৮ ডিসেম্বর তারিখে উদ্যাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
উপদেষ্টা পরিষদ ‘আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস’ এবং ‘জাতীয় প্রবাসী দিবস’ একই দিনে অর্থাৎ প্রতিবছর ১৮ ডিসেম্বর তারিখে দিবস উদযাপনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। সেইসাথে, সরকারি ব্যয় সাশ্রয়ের ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে মন্ত্রণালয়, বিভাগসমূহের স্ব স্ব অধিক্ষেত্রে সমধর্মী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসসমূহ পালনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক দিবস উদ্যাপনকে প্রাধান্য দিয়ে সমধর্মী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসগুলো একই তারিখে একসঙ্গে পালন করার বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদ নির্দেশনা দিয়েছে।বিবিধ বিষয়: মুজিববর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে ব্যয় করা অর্থের হিসাব উপস্থাপন ও ২০২৪-২৫ অর্থবছর থেকে এ সংক্রান্ত বাজেট বরাদ্দ বাতিলের সিদ্ধান্ত।মুজিববর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে ২০১৮-১৯, ২০১৯-২০, ২০২০-২১, ২০২১-২২, ২০২২-২৩, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও আওতাধীন দপ্তর/সংস্থা, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় সংসদ, বাংলাদেশের মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট-এর সর্বমোট ১২৬১.০৫ কোটি টাকা মোট ব্যয় সম্পর্কে উপদেষ্টা পরিষদকে জানানো হয়েছে এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছর থেকে এ সংক্রান্ত বাজেট বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে।


More News Of This Category