,

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় সম্পৃক্ততার আহ্বান মোমেনের

এবিসি ওয়ার্ল্ড নিউজ ২৪.কম: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন আজ বলেছেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদেরকে তাদের আদিভূমি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে ঢাকা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও ইউএনএইচসিআর-এর কাছ থেকে আরও সক্রিয় সম্পৃক্ততা আশা করে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আশা করে, নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে, ইউএনএইচসিআর রাখাইনে তাদের কার্যক্রম জোরদার করবে।’ সফররত জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক হাইকমিশন ও আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব মন্তব্য করেন। ড. মোমেন বলেন, টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গা জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় সম্পৃক্ততা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য অব্যাহত মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে ইউএনএইচসিআর-এর সম্পৃক্তার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে, তিনি হাইকমিশনারকে দ্রুত প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান। মোমেন কক্সবাজার ও ভাসান চরে রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য মিয়াানমার পাঠ্যক্রমের অধীনে মিয়াানমারে ভাষায় দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম, জীবিকার সুযোগ, স্বাস্থ্য সুবিধা ইত্যাদি অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রপচলনের কথা তুলে ধরেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে এসব উদ্যোগ প্রত্যাবাসনের পর মিয়ানমার সমাজে সমাজে পুনর্মিলনে তাদের জন্য সুবিধাজনক হবে। জাতিসংঘ হাইকমিশনার জানান, তার সংস্থা এ বিষয়ে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এবং এ বিষয়ে তিনি আরও চেষ্টা চালাবেন বলে আশ্বাস দেন। মিয়াানমারে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছা ও টেকসই প্রত্যাবাসনে ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশের সাথে একই অবস্থানে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। নির্যাতিত ও বাস্তুচ্যুত বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটি সমগ্র অঞ্চলে বহুমুখী প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি উল্লেখ করেন যে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসন নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে এবং এর ফলে ক্রমবর্ধমান হারে মাদক ও মানব পাচারের মতো অপরাধমূলক কর্মকা-েও জড়িত হয়ে পড়ছে তারা। তিনি বলেন, ‘এছাড়া, বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর দীর্ঘস্থায়ী অবস্থান স্থানীয় জনগণের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি করছে।’ এজন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্থানীয় জনগণের কল্যাণে প্রকল্প হাতে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন। হাইকমিশনার এত বিপুল সংখ্যক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাকে সাময়িকভাবে আশ্রয়দান এবং উদারভাবে তাদের সহায়তা প্রদানের জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। কক্সবাজার ও ভাসান চরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে তিনি বলেন, তার সঙ্গে দেখা হওয়া সব রোহিঙ্গার একান্ত আকাক্সক্ষা হলো দ্রুততম সময়ে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া। তিনি রাখাইনে রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন। গ্র্যান্ডি আরও জানান, ইউএনএইচসিআর ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণের সুবিধার জন্য বেশ কিছু সংখ্যক প্রকল্প গ্রহণ করছে। ভাসান চরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভাসানচরে স্থানান্তরিত সমস্ত রোহিঙ্গার জন্য মানবিক সহায়তা প্রদানে জাতিসংঘ ব্যবস্থার পূর্ণ নিয়োজিত থাকার ওপর জোর দেন। হাইকমিশনার ভাসান চরের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ভাসানচর প্রকল্পের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ এবং এ লক্ষ্যে সকলের কাজ করা উচিত বলে উল্লেখ করেন। হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি ২১ মে বাংলাদেশে আসেন। ২১ মে থেকে ২৩ মে তিনি কক্সবাজার ভ্রমণ করেন এবং ২৪ মে ভাসানচর পরিদর্শন করেন। বাংলাদেশে পঞ্চম সফর শেষ করে আজ তার জেনেভার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে।


More News Of This Category